অতীতের বাজেটগুলো যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন যে অনেকটাই প্রেডিকটেবল ছিল বাজেটগুলো। সেই সব বাজেটগুলোতে খাতভিত্তিক বরাদ্দ একটি নির্দিষ্ট হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অনেকটাই ভিন্ন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সেই সাথে নতুন কোন মেগা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে না। ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শীর্ষক বাজেট প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। চলুন জেনে নেই এবারের বাজেটে আকর্ষণীয় কি কি রয়েছে। ওহ বলে রাখা ভাল এবারের ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।
আইএমএফের শর্তের গুরুত্ব বেশি
আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার শর্ত পূরণের প্রতিফলন থাকছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে। আইএমএফ সাড়ে তিন বছরের জন্য দিয়েছে মোট ৩৮টি শর্ত, যার অর্ধেকের কম আগামী অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এর মধ্যে সুদের হারে করিডর পদ্ধতি তৈরি, রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রভাব স্বর্ণে
রেমিট্যান্স বাড়াতে দেশের প্রচলিত যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে বিদেশফেরত যাত্রীরা ১১৭ গ্রাম ওজনের সোনার বার শুল্ক বিহীন আনতে পারবেন। সেই সঙ্গে প্রতি ভরি বা ১১.৬৬৪ গ্রাম সোনার ওপর আরোপিত শুল্ক করও বাড়ানো হবে। এতে করে ব্যাগেজে আনা সোনার ওপর নির্ভরশীল দেশের বাজারে মূল্যবান এ ধাতুর দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই মূল লক্ষ্য
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চতর জিপিডি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখাই মূল লক্ষ্য। সরকার চায় আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি যাতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছায় এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকে।
টিআইএন বাতিল সুযোগ
সাধারণত কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাতিল বা স্থগিত করার সুযোগ নেই। ১২ সংখ্যার টিআইএন থাকলে অবশ্যই বছর শেষে আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত জানিয়ে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতে হয়। আগামী বাজেটে করদাতাদের এ ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। টিআইএন বাতিল বা স্থগিত করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব আসতে পারে নতুন বাজেটে। যার ফলে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের পরিমান আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংক নির্ভরতা বাড়ছে
এবারের বাজেটের ঘাটতিই ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ (নিট) নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।
সব মিলিয়ে এবারের বাজেটে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিবর্তন আসছে। যেগুলো অন্যান্য অর্থবছরে এমন চিত্র দেখা যায় নি।